Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পোলট্রি খামারে ইদুরের প্রভাব ও দমন ব্যবস্থাপনা

মোঃ ফজলুল করিম

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করার জন্য বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিকভাবে মুরগির উৎপাদন দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া মুরগির কম মূল্য ও আয় বৃদ্ধির কারণে জনপ্রতি মুরগির মাংস গ্রহণের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে নিম্ন মধ্যম আয়ের কৃষক মুরগির খামারকে বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং এ শিল্প আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে গড়ে উঠছে। প্রতি বছর ২-৩ শতাংশ হারে এ শিল্পের প্রসার ঘটছে এবং অদূর ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের ডিম উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৭৫.৪০ মিলিয়ন টন এবং এশিয়ার ডিম উৎপাদনের পরিমাণ ৪৩.৩০ মিলিয়ন টন। ২০১৮-১৯ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৭৩৬ মে. টন ডিম উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে পোলট্রি শিল্প জিডিপিতে ১.৪৭ শতাংশ এবং প্রায় ১ কোটি লোক এ শিল্পের সাথে জড়িত। ২০১৩ সালে মুরগির খামারের পরিমাণ মাত্র ৬৬,০০০ (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৩)। ৫৫,০০০ মুরগির খামার বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবে কারণে কমে গেছে। (ডেইলি স্টার ২০১৩)। এত বড় পোলট্রি শিল্পের মুরগির জন্য নিবিড় পরিচর্যা করা প্রয়োজন যাতে ডিম ও মাংসের উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো যায়। মুরগির খামারের আশপাশে ময়লা আবর্জনা, বিষ্টা, মৃত মুরগি এসব থাকে যা ইঁদুর ও অন্যান্য বালাইয়ের প্রধান আবাসস্থল।


পরজীবী ও মাটি উপরে অবস্থানকারী উভয় ধরনের বালাই পোলট্রি পরিবেশে দেখা যায়। বহিঃপরজীবী জীব হলো মাইট, লাইস, ফ্লি ও টিকস এবং বহিভাগে অবস্থানকারী জীব হলো বিটল, ফ্লাইস, মথ, তেলেপোকা ও ইঁদুর। মুরগির খামারের কাঁচা ভিটি, নোংরা পরিবেশ, নিকটস্থ ফসলের মাঠ ইত্যাদির কারণে এসব জীব মুরগীর খামারের স্থানান্তরিত হয়ে অর্থনৈতিক ক্ষতি করে থাকে। এসব বালাইয়ের মধ্যে ইঁদুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।


মুরগির খামারে আক্রান্ত ইঁদুরের প্রজাতি
কার্যকরী দমন ব্যবস্থা গ্রহণ বা পরিকল্পনা করা যায় যদি ইঁদুরের প্রজাতি সঠিকভাবে চিহ্নিত করা যায়। মুরগির খামারে তিন প্রজাতির ইঁদুর বেশি ক্ষতি করে থাকে। এরা হলো মাঠের কালো ইঁদুর, গেছো ইঁদুর ও নেংটি ইঁদুর।
ছোট ব্যান্ডিকুট ইঁদুর/ছোট কালো ইঁদুর : ছোট ব্যান্ডিকুট/কালো ইঁদুর ফসলের ক্ষেত থেকে শুরু শহরের সব এলাকায় এদের দেখা যায়। এরা মোটাসোটা আকারের ইঁদুর। এদের বিভিন্ন পরিবেশ দেখা যায়। ব্যান্ডিকুট নিশাচর এবং গর্ত খননে পটু। এরা তাদের নিজস¦ তৈরি গর্তে বাস করে এবং মুরগির খামারে  প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি করে।

গেছো ইঁদুর : গেছো ইঁদুর ছোট আকারের ইঁদুর। এরা সাধারণত   বসতবাড়ির ওপরের অংশে বাস করে অনেক সময় পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপেও এরা বাস করে। এদের কালো ইঁদুর, ঘরের ইঁদুর বা জাহাজের ইঁদুরও বলা হয়। এরা নিশাচর প্রাণী। বেশির ভাগ সময় এদের রাতে চলাচল করতে দেখা যায় এবং এদের চলাচল ৩০ মিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে।


ঘরের নেংটি ইঁদুর: নেংটি ইঁদুর ছোট আকারের ইঁদুর। নেংটি ইঁদুর দালান কোটা ও বাসাবাড়িতে দেখা যায়। এরা দেয়ালে, কুঠরি পুরাতন আসবাবপত্র ও গুদামে বাসা তৈরি করে। এরা মুরগির খামারে খাবার খেয়ে, ডিম নষ্ট করে এবং বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। এরা ৩ থেকে ১০ মিটার দূরত্বের মধ্যে চলাচল করে থাকে।   


মুরগির খামারের ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতি
ক. মুরগির খাবারের ক্ষতি : ইঁদুর মুরগির  খাবার খায় এবং খাবার নষ্ট করে এবং যে পরিমাণ খায় তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে থাকে। ইঁদুর তার শরীরের ওজনের তুলনায় ১০ শতাংশ খাবার খায় এবং প্রতিদিন ২৫ গ্রাম এবং বছরের ৯.১ কেজি খাবার খায়, গড়ে প্রতিদিন একটি মুরগির খামারে ৮.৬ গ্রাম মুরগি খাবার খেয়ে থাকে। বিভিন্ন  পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে যে, মুরগির খামারে প্রতিদিন প্রায় ২-৫০ কেজি খাবার খেয়ে এবং খাবারে ব্যাগ কেটে নষ্ট করে থাকে। ইঁদুরের মলমূত্র ও পশমের মাধ্যমে মুরগির খাবার  দূষিত করে এবং এর পরিমাণ প্রায় ০.৪- ৩.৩%। ইঁদুর দ্বারা মুরগির খাবার নষ্ট একটি অর্থনৈতিক ক্ষতি যার পরিমাণ চলমান খরচের প্রায় ৫০-৭৫%।


খ. মুরগি, বাচ্চা ও ডিমের ক্ষতি : বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, ইঁদুর দ্বারা ডিমের ক্ষতির পরিমাণ ০৫% এবং তা ১০% পর্যন্ত হতে পারে যদি সংরক্ষণের অবস্থা দুর্বল থাকে। ডিমের  প্লাস্টিক ট্রে ও ইঁদুর কেটে নষ্ট করে। ইঁদুর প্রায়ই ৩০ দিন বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে আক্রমণ করে এবং প্রায় একটি খামারে ৫.৯% বাচ্চাকে মেরে ফেলে। ইঁদুর প্রায়ই মুরগিকে ভয় দেখায় ও কামড় দিয়ে থাকে এবং মুরগির ডিম পাড়া,      বৃদ্ধি ও খাদ্য গ্রহণে প্রভাব ফেলে থাকে। বাংলাদেশে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া, শ্রীপুর ও কালীগঞ্জ এলাকায় জরিপে দেখা গেছে যে, প্রতি মুরগির খামারে মাসে প্রায় ২৫০ টাকার ডিম নষ্ট করে থাকে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রতিটি মুরগীর খামারে প্রায় ১৮,০০০ টাকার ক্ষতি করে থাকে।


গ. অবকাঠামোর ক্ষতি: খামারের ঘর ও যন্ত্রপাতির নষ্ট করার মাধ্যমে বাস্তবিক পক্ষে ক্ষতি অনেক ব্যয়বহুল। ইঁদুরের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সবসময় কাটাকুটি করা। ইঁদুরের ওপরের অংশের ছেদন দন্ত  প্রতি দিন প্রায় ০.৪ মিমি. হারে বৃদ্ধি পায়। এই দাঁতের বৃদ্ধি রোধ করার জন্য ইঁদুর প্রতিদিন কিছু না কিছু কেটে থাকে, এর ফল হিসেবে খাদ্য ছাড়া অন্য দ্রব্যাদিও কেটে থাকে। ইঁদুরের কাটাকুটি  স্বভাবের জন্য মুরগির ঘর ও দেয়াল দুর্বল হতে পারে। তারা খাবারের পাত্র, পানির পাত্র কেটে নষ্ট করে। মুরগির খামারের মেঝেতে প্রচুর গর্ত তৈরি করে যা বর্ষাকালে ঘরে পানি ঢুকে এবং অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পরে। ইউএসএইডের হিসাব মতে, প্রতি বছর ইঁদুর দ্বারা নষ্ট খাবার ঘর ও যন্ত্রপাতির ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ ইউএস ডলার (দুই হাজার টাকা)। ইঁদুর বৈদ্যুতিক ইনসুলেটর ও তার কেটে শর্টসার্কিট সৃষ্টির মাধ্যমে খামারের ক্ষতি করে থাকে।     


ঘ. বিভিন্ন রোগের বাহক ও সংরক্ষক: ইঁদুর বিভিন্ন সংক্রামক রোগের বাহক ও সংরক্ষক হিসাবে কাজ করে । ইঁদুর প্রাথমিকভাবে মলমূত্র ও পশমের মাধ্যমে মুরগির খাবার সংক্রমিত হয়। ইঁদুর প্রায় ৬০ ধরনের বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে থাকে যা দ্বারা মুরগির ও খামার কর্মী আক্রান্ত হয়ে থাকে। ইঁদুর বিভিন্ন মুরগির রোগ যেমন- সালমোনেলোসিস, কলিব্যক্সিলোসিস, মাইকোপ্লাজমেসিস ইত্যাদি, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত রোগগুলো হলো লেপটোসপাইরোস, টিউবারকোলোসিস, ফাউল কলেরা, ফাউল টাইফয়েড, এভিয়ান প্যারাটাইফয়েড, ভাইরাল ডিজিজ, ক্যাটল ডিজিজ, এবং প্রটোজোয়ান  সংক্রমণ যেমন টক্সোপ্লাজমোসিস, কক্সিডোসিস এসব রোগ ছড়িয়ে থাকে। সবগুলো রোগ মুরগির ডিম, মাংস উৎপাদনের মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে এ রোগ গুলোর মধ্যে সালমোনেলা ও ফাউল কলেরা মুরগির খামার উৎপাদনকারীদের জন্য একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ। ইঁদুর বিভিন্ন পরজীবী যেমন লাইস, ফ্লি এবং মাইটসের আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে থাকে। সালমোনেলা এমন একটি  ক্ষতিকর রোগ যা মুরগির এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে স্থানান্তর হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকার রোগের আক্রমণের ফলে প্রায়ই মুরগি মারা যায়। মুরগির খাবারে খাওয়ার ক্ষমতা কমে যায় এবং বাজারে আক্রান্ত মুরগির বাজার মূল্য কমে যায়। কাজেই ইঁদুর দ্বারা খাবার সংক্রমণ হওয়া কমানো এবং ইঁদুরের সংখ্যা কমানোই হল মুরগির খামারির প্রধান কৌশল।


ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনায় মুরগির খামারের অবস্থা পরিদর্শন: প্রথম ধাপ হলো প্রত্যক্ষভাবে খামারের অবস্থা পরিদর্শন করা। এই পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হলো এখানে কোনো ইঁদুরের উৎপাত আছে কিনা যার মাধ্যমে ইঁদুরের নির্দিষ্ট জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে ক্ষতি করতে পারে। ইঁদুরের উপস্থিতি বা ক্ষতির মাত্রা বিভিন্ন পদ্ধতিতে যাচাই করা যায়। যেমন-১. প্রত্যক্ষ দর্শন, ২. ট্রেপিং ইনডেক্স, ৩. ইঁদুরের পায়ের চিহ্ন, ৪. সতেজ গর্ত পর্যবেক্ষণ।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: ইঁদুর পরিষ্কার পরিবেশ পছন্দ করে না । খামারের যন্ত্রপাতি পরিষ্কার রাখা, আগাছা, আবর্জনার স্তুপ পরিষ্কার করে ইঁদুরের উপদ্রব কমানো যায়। খামারের আশপাশে গাছ ও গাছের ডালপালা কেটে পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে ইঁদুর বাসা তৈরি করতে না পারে।


প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা: সমতল টিনের শিট ব্যবহার করে লম্বালম্বিভাবে ইঁদুরের চলাচল বন্ধ করা যায়। খামারে মেঝে ইটের কনক্রিট দিয়ে তৈরি করতে হবে দেয়াল এবং দরজার বড় ছিদ্র ও ফাঁকা বন্ধ করতে হবে। খামারের বাহিরের অংশ ঢালু রাখতে হবে যাতে ইঁদুর উঠতে না পারে।


ইঁদুরের প্রতিবন্ধকতা সব সময় কার্যকর নয়। দমনে অন্যান্য পদ্ধতি  বিবেচনায় আনতে হবে যেমন ফাঁদ ও রাসায়নিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। মুরগির খামারে জৈবিক পদ্ধতি বা আলট্রাসনিক সাউন্ড পদ্ধতি খুব একটা কার্যকরি হবে না।
ইঁদুরের উপদ্রব বেশি হলে সম্ভাব্য সব রকম দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেই ইঁদুর দমন করা উচিত। ইঁদুর দমনের জন্য কোন একটি একক পদ্ধতি খুব বেশি কার্যকর নয়,  এক্ষেত্রে একাধিক বা সমন্বিত দমন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
ইঁদুর একটি সামাজিক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে সামাজিকভাবেই করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা সরকারের পক্ষে স্থায়ীভাবে সমাধান করা বাস্তবে সম্ভব নয়। তাই বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরিবেশবান্ধব ইঁদুর ব্যবস্থাপনা মডেল সব জেলায় গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে গ্রামবাসীরা দলীয়ভাবে ইঁদুর নিধনে উদ্বুদ্ধ হবেন। খামারীদের জ্ঞান বৃদ্ধির মাধ্যমে খামার ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি, ইঁদুরবাহিত রোগ জীবাণু রোধ, পরিবেশের দূষণ কমানো এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। ইঁদুর দমন প্রযুক্তি উন্নয়নের আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ইঁদুর দমন প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, কারণ ইঁদুর দমন প্রযুক্তি অন্যান্য বালাই ব্যবস্থাপনা হতে সম্পূর্ণ বিভন্ন রকমের। ইঁদুর দমন অভিযান বা কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।             

                                                                                                                                                 
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা, মোবাইলনং-০১৭২৪-১৪১৬৬২, ই-মেইল : fazlurahi@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon